ঢাকা,রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

বঙ্গবন্ধু স্বরণে শিক্ষাবান্ধব ইউএনও’র অনন্য উদ্যোগ

চকরিয়ায় ১৪৫ বিদ্যালয়ে স্থাপিত “বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বুক কর্ণার”

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ১৪৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০২১ সালের মার্চমাসে একসঙ্গে প্রত্যেক বিদ্যালয়ে একটি করে শহীদ মিনার নির্মাণকাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আর সফল এই উদ্যোগটি বাস্তবায়নের পর এবার শোকের মাস আগস্ট তথা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদত বার্ষিকীতে শিক্ষাবান্ধব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ সামসুল তাবরীজ এর অনন্য উদ্যোগে উপজেলার ১৪৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছে “বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বুক কর্ণার”। ইতোমধ্যে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি করে কক্ষে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার স্থাপনের লক্ষ্যে সেইভাবে সাজানো হচ্ছে। প্রতিটি “বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বুক কর্ণার” স্থাপনে বিদ্যালয়ের স্লিপফান্ডের বরাদ্দের পাশপাশি ইউএনও সৈয়দ সামসুল তাবরীজ উপজেলা প্রশাসনের তরফথেকে সার্বিক সহযোগিতা দিয়েছেন।

বিদ্যালয়গুলোতে স্ব-চিত্র বঙ্গবন্ধু বুক কর্ণার স্থাপন করে বেশ কিছু বঙ্গবন্ধুর জীবনী লেখা বইয়ের সমাবেশ এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার স্থাপন করে মহান মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখা বইয়ের সমাবেশ ঘটানো হয়েছে। এই বুক কর্ণার থেকে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুর জীবনি সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে পারছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অধীন জনপ্রশাসন ক্যাডারে আট উপজেলা থেকে জাতীয় শুদ্ধচার নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ ইউএনও চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ সামসুল তাবরীজ চকরিয়া নিউজকে বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া কোমলমতি শিক্ষার্র্থিদের মাঝে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন বৃত্তান্ত এবং মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতেই মুলত আমরা প্রতিটি বিদ্যালয়ে “বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বুক কর্ণার” স্থাপনের উদ্যোগটি নিয়েছি। ইতোমধ্যে উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় অবস্থিত ১৪৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছে “বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বুক কর্ণার”।

ইউএনও সামসুল তাবরীজ বলেন, গতবছর শিক্ষা অধিপ্তরের বরাদ্দ দেওয়া স্লিপফান্ডের টাকার বিপরীতে একসঙ্গে উপজেলার ১৪৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। যেহেতু করোনাকালীন সময়ে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ আছে, সেহেতু বরাদ্দের টাকা আমরা শহীদ নির্মাণে কাজ করেছি। এরই অংশহিসেবে এবছরও শ্লিপফান্ডের বরাদ্দের টাকা এবং উপজেলা প্রশাসনের দেয়া আর্থিক সহযোগিতায় উপজেলার ১৪৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে “বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বুক কর্ণার” স্থাপন করা হয়েছে।

চকরিয়ার ইউএনও আরও বলেন, এখনো বেশকিছু বিদ্যালয়ে “বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বুক কর্ণার” স্থাপন কাজ চলমান। আশাকরি এই আগস্টের মধ্যে আমরা সবকটা বিদ্যালয়ে কাজ শেষ করতে পারবো। এইজন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ের এসএমসি কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষককে বলে দেওয়া হয়েছে। আর পুরো কাজ শেষ হওয়া বিদ্যালয়গুলোতে শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদত বার্ষিকীর দিনে স্থাপিত “বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বুক কর্ণার” সমুহ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবো।

চকরিয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অঞ্জন চক্রবর্তী চকরিয়া নিউজকে বলেন, উপজেলার প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার স্থাপনের প্রথমধাপ হিসেবে চলতিবছরের ১৬ মার্চ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষথেকে ইউএনও সৈয়দ সামসুল তাবরীজ ১৪৫ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং চারটি কলেজকে বই উপহার দিয়েছেন।

যার মধ্যে আছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম, শৈশব, জীবন আর্দশ, রাজনৈতিক কৌশল, আর্দশসহ সামগ্রিক জীবন চিত্রের উপর লেখা পাণ্ডুলিপি। প্রতিটি বিদ্যলয়ে ৪৬টি করে মোট ১৪৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেওয়া হয়েছে ৬৮০৮টি বই। তাঁর আগে বিদ্যালয়গুলোতে তেরী করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বুক কর্ণার” এর সুসজ্জিত কক্ষ।

উপজেলার বড় ভেওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলসাদ আঞ্জুমান রুমা চকরিয়া নিউজকে বলেন, স্থাপিত কর্নারগুলো দেখলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সর্ম্পকে জানতে পারবে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।

এছাড়াও শিক্ষার্থীরা জানতে পারবে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা দাবি, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুথানের ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপিত হওয়ায় এখন থেকে শিক্ষার্থীরা সহজেই স্বাধীনতা সংগ্রামের নানা বইও পড়তে পারবে।

চকরিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তছলিম উদ্দিন চকরিয়া নিউজকে বলেন, নতুন প্রজন্মেলর শিক্ষার্থীদেরকে জাতির পিতার আত্মজীবিনী ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে এই বিদ্যালয়ে “বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বুক কর্ণার” স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও আমাদের বিদ্যালয়ে আধুনিকমানের এই কর্ণার নির্মাণে ইউএনও মহোদয়ও সহযোগিতা দিয়েছেন।

প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ এবং “বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বুক কর্ণার” স্থাপনের এই উদ্যোগকে একটি তাৎপর্যপুর্ণ অধ্যায়ের সুচনা বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন চকরিয়া পৌরসভার কাজিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা (এসএমসি) কমিটির সভাপতি সাংবাদিক এম.জিয়াবুল হক। তিনি বলেন, করোনা সংকটে বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও গেলবছর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (বর্তমানে উখিয়া উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা) গুলশান আক্তার প্রতিটি বিদ্যালয়ে যাতে স্লিপফান্ডের টাকা যথাযথভাবে ব্যবহার হয়, সেইজন্য তিনি ওই টাকার বিপরীতে প্রতিটি বিদ্যালয়ে একটি করে শহীদ মিনার নির্মাণ করে দিয়েছেন।

একইভাবে এবছরও উল্লেখিত স্লিপফান্ডের টাকায় উপজেলার শিক্ষাবান্ধব ইউএনও সৈয়দ সামসুল তাবরীজ ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অঞ্জন চক্রবর্তী প্রতিটি বিদ্যালয়ে একটি করে “বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বুক কর্ণার” উপহার দিয়েছেন। শিক্ষা অধিদপ্তরের বরাদ্দের পাশপাশি ইউএনও মহোদয় উপজেলা প্রশাসনের তরফথেকেও প্রতিটি বিদ্যালয়কে সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছেন। যার বদৌলতে আজ উপজেলার ১৪৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপিত হয়েছে “বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বুক কর্ণার”।

তিনি বলেন, একসময় দুই থেকে চার কিলোমিটার হেঁেট উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে বিশেষ দিবসে প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে শ্রদ্ধা জানাতে হতো। সেখানে এখন নিজের বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় স্থাপিত শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।

আর এবছর অজঁপাড়া গায়ের বিদ্যালয়ে “বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বুক কর্ণার” স্থাপিত হবার মধ্যদিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জানতে পারবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবিনী এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস। এই দুইটি মহতী উদ্যোগ বাস্তবায়নে নিবেদিতভাবে কাজ করায় চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ সামসুল তাবরীজ ও উপজেলা প্রশাসনের প্রতি সত্যিই কৃতজ্ঞ চকরিয়াবাসি।

পাঠকের মতামত: